এই ২০ লক্ষ কোটির আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা প্রয়োজন ছিল কমপক্ষে এক মাস আগে, মত বিশেষজ্ঞদের
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর আগে থেকেই ধুঁকছিল অর্থনীতি।
প্রেরনা দত্তঃ সঙ্কটের গ্রাস থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করতে ও ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ে তুলতে আজ ২০ লক্ষ কোটি টাকার ‘আর্থিক প্যাকেজ’ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যা দেশের জিডিপি-র ১০ শতাংশর সমান। অন্তত আরও এক মাস আগে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা উচিৎ ছিল কেন্দ্রের। বৃহস্পতিবার দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর বেনেট ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ‘কোভিড-১৯, জান ভি জাঁহা ভি’ শীর্ষক এক গ্লোবাল ওয়েবিনারে এ কথা জানান প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রণব সেন। তাঁর কথায়, ‘এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র যা করেছে তা সামান্য একটা অংশ মাত্র।
প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, এর পুরোটাই নতুন নয়। গরিবদের সুরাহায় সরকার আগেই যে প্রকল্প ঘোষণা করেছে এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নগদের জোগান বাড়াতে যে ত্রাণ ঘোষণা করেছে, তা-ও এই ২০ লক্ষ কোটি টাকার অংশ।
২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ যথেষ্ট ভালো হলেও তা কী ভাবে হিসাব করা হয়েছে তার উপর সবকিছু নির্ভর করছে। যদি এই অর্থ পুনর্বাসন এবং নতুন কারখানা তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়, তা হলে এর বিপুলতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। এর পাশাপাশি কতদিনে ওই অর্থ খরচ করা হবে তার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে। এক বছরে ২০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করা এক কথা আবার তিন বছরে ওই সমপরিমাণ অর্থ খরচ করা সম্পূর্ণ ভিন্ন, প্রণব জানান।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর আগে থেকেই ধুঁকছিল অর্থনীতি। কোভিড-১৯ গোটা বিশ্বের সঙ্গে ভারতের অর্থনীতিও কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, ২০ লক্ষ কোটি টাকার দায়ই তে কেন্দ্র বহন করবে না, এটা স্পষ্ট। লকডাউন শুরুর পরে মোদী সরকার ১.৭ লক্ষ কোটি টাকার গরিব কল্যাণ প্রকল্প ঘোষণা করেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ত্রাণের পরিমাণ ৪.৫ লক্ষ কোটি টাকা। দুই মিলিয়ে ৬.২ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আরও প্রায় ১২.৮ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক দাওয়াই আসতে চলেছে।
অর্থনীতিবিদ প্রণব সেন এর কথায়, ‘এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র যা করেছে তা সামান্য একটা অংশ মাত্র।বুধবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যে পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন তা শিল্প সংস্থাগুলির ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য করেননি, বরং সেগুলিকে চালু রাখা এবং উৎপাদন ক্ষমতা সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করেছেন। দেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলিকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতেই এই পদক্ষেপ।’ এই ওয়েবিনারের প্রেজেন্টিং স্পনসর ছিল ডারউইন ইন্ডাস্ট্রিজ।
প্রণবের কথায়, ‘প্রায় বারো বছর আগে ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন তৈরি হয়েছে। কিন্তু, তা দিয়ে দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা সম্ভব হবে না। আমাদের শ্রমিকদের পিছনে লগ্নি করতে হবে। বিদেশে কোনও কর্মীকে ১ দিনের জন্য নিয়োগ করা হলে তাঁকে প্রোরেটা ভিত্তিতে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি দিতে হয়। আর আমাদের এখানে স্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করার আগে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মুখে পড়তে হয়। এখানে কর্মীরা জেনে গিয়েছে তাঁদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই।