“এসএফআই বনাম মুখমন্ত্রী ” মুখ্যমন্ত্রীর মেট্রো স্টেশনের নাম বদলের সিদ্ধান্তে প্রতিবাদী কমরেড ছাত্র সমাজ
চিঠির বিপরীতে কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো অব্দি পাইনি এসএফআই দল

তিয়াসা মিত্র : সাম্প্রতিক সংবাদ মাদ্ধমে প্রকাশিত হয়েছে গাড়িয়া থেকে দমদম এয়ারপোর্ট পর্যন্ত মেট্রো স্টেশনের মধ্যে কয়েকটি স্টেশনের নাম বদলের কথা। যে সিদ্ধান্ত ইতি মধ্যে নিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে রাজ্যের উত্তর ২৪ এসএফআই দলের সভাপতি এবং সেই দলের সদস্যরা ইতিমধ্যে ইমেইল এর মাদ্ধমে রেল কতৃপক্ষকে চিঠি পেশ করেছে।
তাদের বয়ানে শোনা গেছে – “ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের নিউ গড়িয়া-এয়ারপোর্ট রুটের একটি স্টেশন বাংলা তথা দেশের গর্ব, স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক তিতুমীরের নামে রাখার কথা ছিল। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে মেট্রো কর্তৃপক্ষ তিতুমীরের নাম বাদ দিয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। আমরা ভারতের ছাত্র ফেডারেশন, উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলা কমিটি এর বিরোধিতা করছি এবং তিতুমীরের নাম ফেরানোর আবেদন করছি। মুখ্যমন্ত্রী নিজে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন অনেক স্টেশনের নাম বদলে বিশিষ্টজনেদের নামে রেখেছিলেন। এখন ওনার আপত্তি ঠিক কি কারণে তাও জানা দরকার। একই সাথে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের একটি বড় অংশ যে এলাকা দিয়ে যাবে বা যে এলাকাকে সংযুক্ত করবে সেই এলাকা বা শহর গড়ে তোলার পিছনে অন্য অনেকের সাথে পরিকল্পনায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং প্রাক্তন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী। আমরা তাদের নামেও একটি করে স্টেশনের নামকরণের আবেদন জানাচ্ছি। তা না হলে ইতিহাস এবং তাদের ভূমিকাকে অপমান করা হবে। “
এই বক্তব্য রেখে তারা যে চিঠি পেশ করেছে সেটি হলো-
জেনারেল ম্যানেজার,
মেট্রো রেলওয়ে, কলকাতা
জুবিলি লাইনস, বিদ্যাসাগর সেতু,
ময়দান, হেস্টিংস
কলকাতা – ৭০০০২২
পশ্চিমবঙ্গ
বিষয় – মেট্রো স্টেশনের নামকরণ সংক্রান্ত আবেদন
মহাশয়,
পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের অল্প এলাকার মধ্যে মেট্রো চলাচলও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বাকি কাজও শেষের মুখে। আমরা আশা করি, কিছুদিনের মধ্যেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প পূর্ণাঙ্গ রূপ ধারণ করবে এবং যাতায়াতে যথেষ্ট সুবিধা এনে দেবে। তার জন্য আপনাদের প্রত্যেক কর্মকর্তা এবং শ্রমিক বন্ধুদের আগাম অভিনন্দন জানাই।
এই সংক্রান্ত একটি বিশেষ বিষয়ে আমরা আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। নিউ গড়িয়া – এয়ারপোর্ট (মেট্রো লাইন – ৬) মেট্রো রুটে সিটি সেন্টার ২ সংলগ্ন মেট্রো স্টেশনটির নাম বাংলা তথা দেশের গর্ব, স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর সেনানী তিতুমীরের নামে হবে জেনে আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু, সম্প্রতি কিছু সংবাধ-মাধ্যম সূত্রে জানতে পারছি যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে নাকি আপনারা ঐ স্টেশনের নাম তিতুমীরের নামে না রেখে সিটি সেন্টার ২ ই রাখতে চাইছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বহু মেট্রো স্টেশনের নাম বদলে বেশ কিছু বিদ্বজন ও স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামে রেখেছিলেন। তাহলে এখন মুখ্যমন্ত্রী এমন পরামর্শ কেন দিচ্ছেন আর আপনারাই বা কেন তা মেনে নিচ্ছেন তা আমরা বুঝতে পারছি না। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে ফের তিতুমীরের নামেই ঐ স্টেশনের নাম রাখার আবেদন জানাচ্ছি। নাহলে তা তিতুমীরের স্মৃতির প্রতি তো বটেই, এই দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার গুরুত্বপূর্ণ অবদান এবং সার্বিকভাবে বাঙালীর প্রতিই অপমানজনক সিদ্ধান্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে।
একইসাথে, আমরা আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, যে এলাকা দিয়ে এই মেট্রো প্রকল্পের বড় অংশ যাচ্ছে সেই নিউটাউন এলাকা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কিংবা প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের ভূমিকা যেমন রয়েছে তেমনই প্রায় গোটা পরিকল্পনাটিই ছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বজন শ্রদ্ধেয় জ্যোতি বসুর। আমরা চাই এই ইতিহাসকে মান্যতা দিয়ে প্রকল্পের মধ্যে কোনও একটি স্টেশনের নামঙ্করন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুর নামে হোক। এবং যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন থেকে আজকের সল্টলেক গড়ার পেছনে যার মস্তিষ্ক ও ঘাম জড়িয়ে আছে, প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর নামেও ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো (মেট্রো লাইন – ২) প্রকল্পের একটি স্টেশনের নাম হওয়া উচিৎ।
উপরোক্ত প্রস্তাব না মানা হলে আসলে তা ইতিহাসের সাথে বেইমানি কিংবা ইতিহাসকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গোটা বাস্তবায়নটাই বামফ্রন্ট সরকারের আমলে হলেও যেহেতু শহরটির পরিকল্পনা করেছিলেন ডাঃ বিধান রায়, তাই পরবর্তীতে সল্টলেক গড়ে উঠলে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার ঐ নগরীর নাম রেখেছিল বিধাননগর। অন্যদিকে, সমগ্র পরিকল্পনার কারণে নিউটাউনের নাম জ্যোতি বসু নগর রাখা হলেও ২০১১ সালের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই শহরের নাম জ্যোতি বসুর নামে রাখতে অসম্মত হন।
আমরা আশা করি, আপনি আমাদের এই দাবির গুরুত্ব বুঝবেন এবং ইতিহাসকে মান্যতা দিয়ে কোনওরকম রাজনৈতিক বা অন্য কোনও পক্ষপাত ছাড়া বিচার করে আমাদের দাবিগুলির বাস্তবায়ন করবেন। এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আপনারা চাইলে আমরা আপনাদের সাথে সাক্ষাতে আলোচনা করতে আগ্রহী।
ধন্যবাদান্তে,
আকাশ কর,
সম্পাদক,
ভারতের ছাত্র ফেডারেশন, উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলা কমিটি
দীপ্তজিত দাস,
সভাপতি,
ভারতের ছাত্র ফেডারেশন, উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলা কমিটি
তাং – ০১/০৪/২০২২
তবে এই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া তারা পাইনি বলেই খবর সূত্রে।