তিন আইপিএস অফিসারকে বদলি নিয়ে এবার শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ রাজ্য
তিন আইপিএস অফিসারকে বদলি করা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার

পল্লবী কুন্ডু : কনভয় হামলা ঘটনার পরেই জেপি নাড্ডার(J. P. Nadda) সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা তিন অফিসারকে বদলির নির্দেশ। তারপর থেকেই সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ গুরুতর হতে থাকে। এবার তিন আইপিএস অফিসারকে বদলি করা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে(Union Home Ministry)র নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে(Supreme Court ) আবেদন করার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানা গেছে প্রশাসনিক সূত্রে। শীর্ষ আদালতে গিয়ে কেন্দ্রের ওই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ নেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। নচেত্ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে নেওয়া ছাড়া রাজ্যের আর কোনও উপায় থাকবে না। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, আইপিএস ক্যাডার আইনের ৬ (১) ধারায় বলা রয়েছে, যদি এমন কোনও বিষয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মতানৈক্য হয়, তা হলে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হবে।
তবে এই নিয়ে আইন বিশারদদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। অর্থাত্, তিন আইপিএস-কে বদলি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আইনি সঙ্ঘাতের যাওয়ার কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে রাজ্য সরকার। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। তবে রাজ্য সরকারের নির্দেশ মোতাবেক ওই তিন অফিসার রাজ্য ছেড়ে আপাতত কোথাও যাচ্ছেনও না। কেন্দ্রের নির্দেশের পরেও ওই তিন অফিসারকে যে তাঁদের নতুন নিয়োগের জন্য ছাড়া হবে না, তা প্রকাশ্যেই টুইট করে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরেই তিনি পরপর তিনটি টুইটে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর মূল বক্তব্য কেন্দ্রের ওই উদ্যোগ রাজ্য সরকার কোনওমতেই মেনে নেবে না। মমতার মতে, ওই নির্দেশ ‘অসাংবিধানিক’। প্রথম টুইটটিতে মমতা লিখেছিলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তি অগ্রাহ্য করে রাজ্যে কর্মরত ৩ জন আইপিএস অফিসারকে সেন্ট্রাল ডেপুটেশনে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার। এ ক্ষেত্রে ১৫৯৪ সালের আইপিএস ক্যাডার বিধির জরুরি পরিস্থিতিজনিত ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে’।
দ্বিতীয় টুইটে মমতার অভিযোগ ছিল, ‘এই ঘটনা রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ এবং পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত সরকারি আধিকারিকদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। বিশেষত, ভোটের আগে এই ঘটনা আসলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত হানার প্রয়াস। যা পুরোপুরি অসাংবিধানিক এবং অগ্রহণীয়’। তবে কেন্দ্র রাজ্যের এই বিতর্কের জেরে ওই তিন অফিসারের কর্মক্ষেত্র কতটা প্রভাবিত হতে পারে সে বিষয়টিও যথেষ্ট চিন্তার।
রাজীব মিশ্র, প্রবীণ ত্রিপাঠি এবং ভোলানাথ পাণ্ডের মধ্যে শেষের জন অর্থ্যাৎ ভোলানাথ পাণ্ডে ঘটনার দিন ছুটিতে ছিলেন। তিনি আগেই পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে তিনদিনের ছুটি নিয়েছিলেন। হামলার ঘটনা ঘটেছিল তাঁর তিনদিনের ছুটির তৃতীয় দিনে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ঘটনার পরদিন ভোলানাথের কাজে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান, অসুস্থ থাকায় তিনি আরও একদিন ছুটি বাড়াতে চান। তা মঞ্জুরও করা হয়। কিন্তু ঘটনার সময় রাজ্যে অনুপস্থিত থাকলেও ঘটনার ‘দায়’ তিনি এড়াতে পারেন না বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাই অন্য দু’জনের সঙ্গে তাঁকেও ডেকে পাঠানো হয়েছে। না যাওয়ায় বদলিও করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থায়।
সূত্রের খবর, শীর্ষ আদালতে এই বিষয়গুলিই তুলে ধরতে চাইবে রাজ্য। পাশাপাশিই বলা হবে, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের বিষয়ে ‘অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ’ করে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের হানি ঘটাচ্ছে। এটি ‘অসাংবিধানিক এবং রীতিবিরুদ্ধ’। এরপর সংশ্লিষ্ট ঘটনা নিয়ে নজর রাখা হবে শীর্ষ আদালতের দিকেই।