নেই করোনা হুঁশ, আতশবাজি ফাটিয়ে, মুখে মাস্ক না পরে নিউ ইয়ারে ঘুরে বেড়ালো রাজ্যবাসী
উত্সবমুখী জনতার এ দিনের এই বেপরোয়া ভাব টেক্কা দিল বড়দিনের ভিড়কেও

পৃথা কাঞ্জিলাল: উৎসবমুখী কলকাতা মানেই পার্কস্ট্রিটের (Park Street) রাত সাথে একগুচ্ছ ছবি ও খাওয়াদাওয়া। তবে কোরোনাবিধি মেনেই এই বছর বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা ও ছিল। কলকাতা হাইকোর্ট বলেছিল, শহরের কোথাও যাতে ভিড় না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকে। পুলিশ-প্রশাসন জানিয়েছিল, আদালতের নির্দেশ মেনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হবে সর্বত্র। বৃহস্পতিবার বছরের শেষ দিনে উত্সবমুখী শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরে দেখা গেল, পুলিশ-প্রশাসন কিছু ব্যবস্থা রেখেছে ঠিক রাখলেও ভিড়ে লাগাম টানা গেল না, দূরত্ব-বিধি পালন বা মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করাও সম্ভব হয়নি সর্বত্রই চলল বেপরোয়া উদ্যাপন। উত্সবমুখী কলকাতায় এক যুগলের বয়ানে, ‘করোনার নিয়ম নতুন বছরে মানব, শপথ নিয়েছি। আজ কিছু মানা যাবে না। আজ শুধুই পার্টি!’
উত্সবমুখী জনতার এ দিনের এই বেপরোয়া ভাব টেক্কা দিল বড়দিনের ভিড়কেও। পুলিশেরই হিসেব বলছে, শুধুমাত্র পার্ক স্ট্রিট আর চিড়িয়াখানায় বড়দিনে দুপুর ২টো পর্যন্ত যেখানে ৮০ হাজার লোক হয়েছিল, সেখানে বছরের শেষ দিনে দুপুর ২টোর মধ্যে সেই সংখ্যা আড়াই লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। একই ভাবে তিন-চার গুণ বেশি ভিড় হয়েছিল ধর্মতলা, ময়দান, ভিক্টোরিয়া ও নিউ টাউনের বিভিন্ন বিনোদন পার্কে। রাত বাড়তেই সেই ভিড় সরে এসেছে বিভিন্ন পানশালা ও রেস্তরাঁ চত্বরে। সন্ধ্যায় ভিড়ে ঠাসা পার্ক স্ট্রিটের একটি রেস্তরাঁর সামনের ফুটপাতে বসে পড়েছিল আট-ন’জন তরুণ-তরুণীর একটি দল। কারও মুখেই মাস্ক নেই এবং মাটিতেই শুরু হল কেক কেটে ওই দলের এক জনের জন্মদিন পালন। কর্মরত এক পুলিশকর্মী রেগে আগুন কারও মুখে মাস্ক নেই দেখে। ওই দলেরই এক জন তাঁকে বললেন, ‘রেস্তরাঁয় ঢুকে দেখুন, কেউ মাস্ক পরে আছে কি না! মাস্ক পরে খাওয়া যায় না। আমরা ফুটপাতে কেক খাব, তাই মাস্ক পরব না।’ খানিক কথা কাটাকাটির পরে পুলিশকে হাল ছাড়তেই হল। রেস্তরাঁয় লাইন দেওয়া চার-পাঁচ জন বললেন, ‘বাচ্চারা কেক খাচ্ছে, ছাড়ুন না। একটু তো আনন্দ করবে! আমরাও তো শুধু রেস্তরাঁয় ঢুকব বলে মাস্ক পরে আছি। মাস্ক না পরলে ঢুকতে দেবে না। উত্সবের রাতে মাস্ক এখন শুধুই গেট পাস!’
চিড়িয়াখানার সামনে ১৬ জনের একটি পরিবারের সকলেই রাস্তায় মাস্ক খুলে দাঁড়ালেন ছবি তুলতে। এক জন হাসতে হাসতে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি কর ভাই, নইলে কাল মাস্ক পরিনি বলে কাগজে ছবি উঠে যাবে।’ যাঁর দিকে তাকিয়ে বলা, তিনি নিজস্বী তুলতে তুলতেই স্বগতোক্তি করলেন, ‘পুজোর শপিং, ঠাকুর দেখা থেকে বড়দিনে ঘোরা! কিছুতেই তো করোনা হল না। বছরের শেষ দিনে নাকি করোনা ধরবে!’ পাশ দিয়ে হাঁটা এক বৃদ্ধা অবশ্য ওই পরিবারের বেপরোয়া ছবি তোলার দৃশ্য দেখেই খানিক সরে দাঁড়ালেন।
রাত ১২টা নাগাদ পার্ক স্ট্রিট মোড়ে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী আবার বললেন, ‘আমার আবার অন্য প্রশ্ন। জীবন আগে না কাজ? কার্ফু জারি না করলে মানুষ বেরোবেই। কত জনকে বোঝাব ভিড়ের মধ্যে ঢুকে? পুলিশের নিরাপত্তা কে দেখবে? মাস্ক না পরার কত যে অছিলা।’ পাশে দাঁড়ানো আর এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘ওয়াচটাওয়ারের ডিউটি নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি চলছিল গত দু’দিন। ওখানে এক বার উঠতে পারলে ভিড়ে ঢুকতে হয় না। আমরা যাঁরা ওই ডিউটি পাইনি, তাঁরা দূর থেকে কিছু লোককে মাস্ক বিলি করে, মোবাইলে ছবি তুলে রেখেই দায়িত্ব পালন করছি।’
এমনকি সর্বোচ্চ আতসবাজিও ফেটেছে বর্ষবরণের রাতে, পাড়া থেকে শুরু করে বোরো রাস্তা বেপরোয়া ভাবে বাজি ফাটার ঘটনা কানে এসেছে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মেতেছিলেন অনেকেই তবে খেয়াল রাখেন নি বিধির, ঘুরে বেড়িয়েছেন যত্রতত্র, এর ফলে আগামীদিনে কি প্রভাব পড়তে চলেছে তা নিয়ে চিন্তিত সকলেই।