অনন্তকাল থেকে এক পবিত্র ঐতিহ্য পুরানের “ভাইফোঁটা”
আচার্য পন্ডিতের তালপাতার পুঁথি ‘দীপোৎসবকল্প’ সংগ্রহ করা হয়েছে ইতিহাস

তিয়াসা মিত্র : বাংলা তথা গোটা ভারতের এক অবিচ্ছেদ্য উৎসব ভাইফোঁটা যার পোশাকি নাম ” ভাতৃদ্বিতীয়া ” , সাধারণত কালীপূজোর অর্থাৎ কার্তিক মাসের শুক্লদ্বিতীয়া দিন পালিত হয়ে এই অনুষ্ঠান। কিন্তু এই ভাইফোঁটার পিছনে ইতিহাস কি সেটা জানার জন্য যেতে হবে পুরান-এর সময়ে কালে। বহু পন্ডিতদের বহু মতান্তর দেখা এই ক্ষেত্রে তবে তার মধ্যে যে দুটি গল্পগাথা বা সত্যি সময়ে কালের কথা মেনে এই আচারানুষ্ঠান পালন করা হয়ে তা হলো –
নরকাসুর নামে এক দানব হত্যার পর ভগবান শ্রী কৃষ্ণ যখন তার বোন সুভদ্রার কাছে ফিরে আসেন তখন সুভদ্রা ওনার কপালে চন্দনের ফোটা এবং কালো কাজলের ফোঁটা দিয়ে দেন। সেই দিন থেকে বিশ্বাস করা হয়ে নিজের ভাই বা দাদার মঙ্গল কামনাতে এই ভাইফোঁটা দেওয়ার রীতি চলে আসছে বংশপরম্পরাতে। তবে ভাইফোঁটার ছড়া-এ বলা আছে – ” যমুনা দায় জমকে ফোটা,আমি দি আমার নামকে ফোঁটা ” -এই ছড়া অনুযায়ী বলা হয় মৃত্যুর রাজা যমরাজ তার বোন যমুনার হাত থেকে ফোঁটা নিয়েছিলেন।
চতুর্দশ শতাব্দীতে সর্বানন্দসুরী নামে এক আচার্য পণ্ডিতের তালপাতার পুথি, ‘দীপোৎসবকল্প’ থেকে জানা যায় জৈন ধর্মের অন্যতম মহাপ্রচারক মহাবীর বর্ধমানের মহাপ্রয়াণের পর তাঁর অন্যতম অনুগত সঙ্গী রাজা নন্দীবর্ধন মানসিক এবং শারীরিক ভাবে খুবই ভেঙে পড়েন। বন্ধ করে দেন খাওয়াদাওয়াও। এইরকম অবস্থায় তাঁর প্রিয় বোন অনসূয়া নন্দীবর্ধনকে তাঁর নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথি। রাজার কপালে রাজতিলক পরিয়ে বোন অনসূয়া ভাইকে কিছু খাবার খাইয়ে দেন, আর বলেন, “রাজ্যের প্রজারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, এই অনশন তোমাকে মানায় না। হে ভ্রাতা, হে রাজন, রাজতিলক এঁকে দিলাম তোমার কপালে এবং ক্ষুধা নিরসনের জন্য গ্রহণ করো খাদ্য। তুমি সাদর আপ্যায়িত হও। সর্ববিধ মঙ্গলের জন্য তুমি জেগে ওঠো, ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন। তোমার দীর্ঘায়ু কামনা করি। প্রতি বছর এইদিনে তোমাকে রাজতিলক পরিয়ে অভিষিক্ত করা হবে, এই আমার ব্রত।”
ইতিহাস যাই হয়ে থাকে , প্রত্যেক বোন/দিদি তার ভাই এবং দাদাদের মঙ্গলকামনাতে এই দিনটিকে পবিত্র করে তোলে প্রতি বছর। এবং এই রেওয়াজ অবিভক্ত ভারতের সময়ের আগে থেকে চলে আসছে একই ভাবে।
ছবির সৌজন্যে “সববাংলায়”