HealthLife Style

কচু শাক মানব দেহের জন্য কতটা উপকারীতা কি জানেন আপনি ?

কচু শাকই.মানবিক দেহের যে পুষ্টির চাহিদার তা অনেকখানি পূরণ করতে সক্ষম

পল্লবী কুন্ডু : খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমরা কচু শাক(Taro stem)কে বন জঙ্গলেই দেখতে পাই। এখনকার ছেলে মেয়েরা বন-জঙ্গল হিসেবেই কচু শাককে চেনে। কারণ সময়ের সাথে সাথে আমাদের খাদ্য তালিকা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এই ধরণের যাবতীয় ঘরোয়া খাবার। কিন্তু এই কচু শাকের যে কত গুন তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন আপনারা ? ইলিশ, চিংড়ি, ছোট মাছ বা শুটকি মাছ দিয়ে কচু শাকের তরকারি বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। খুব বেশি সহজলভ্য বলে কচুশাককে অনেকেই গুরুত্ব দিতে চান না।

কিন্তু এই কচু শাকই.মানবিক দেহের যে পুষ্টির চাহিদার তা অনেকখানি পূরণ করতে পারে। কচুশাক ভিটামিন এ-এর খুব ভালো উত্‍স, রাতাকানা রোগসহ ভিটামিন এ-এর অভাবে হওয়া সকল ধরনের রোগ প্রতিরোধে কচুশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া কচুশাক আয়রনসমৃদ্ধ বলে এর সমাদর অনেক বেশি। আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে সব ডাক্তাররাই কচু শাক খাওয়ার পরামর্শ দেন। ভিটামিন এ-এর পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন বি এবং সি-ও। তাই মুখ ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধেও কচুশাক সমান ভূমিকা রাখে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, তাই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায় এই কচু শাক।

কচু শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান সমূহ। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে থাকে- ৬.৮ গ্রাম শর্করা, ৩.৯ গ্রাম প্রোটিন, ১০ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), ০.২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন), ১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ১.৫ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৫৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি।

তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক এই কচুশাকে কি কি উপকারিতা লুকিয়ে আছে – কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে তাই রক্ত শূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য কচুশাক খাওয়া একরকম আবশ্যক বললেই চলে। এতে আছে ভিটামিন এ থাকে যা আমাদের রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধসহ দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেয়। কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে যা খাবারকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে থাকে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তাঁরা কচুশাক খেতে পারেন।

আমাদের শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখতে কচু শাক অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এই শাকের আয়রন ও ফোলেট রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে অক্সিজেন সংবহন পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে। কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এর লৌহ উপাদান আপনার দেহে সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। তাছাড়া ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ছোট বেলা থেকেই কচু শাক খাওয়ানো উচিত।

তবে অবশ্যই কচু শাকের বিষয়ে বেশ কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হয়। কচু শাক বা কচু খেলে অনেক সময় গলা চুলকায় কারন এতে অক্সলেট নামক উপাদান থাকে। তাই কচু রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার করা উচিত। তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের কচু বা কচুশাক না খাওয়াই ভালো। তবে কচু শাকের সব চেয়ে বড় উপকারিতা হল এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ফসফরাস। আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠনে এবং ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচু শাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এগুলি ছাড়াও কচু শাকে রয়েছে নানা রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গর্ভবর্তী মা ও শিশুর জন্য যা অত্যন্ত উপকারী। তাছাড়া কচুশাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল কমে তাই উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের জন্য কচুশাক এবং কচু বেশ উপকারী। নিয়মিত কচুশাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের হওয়ার সম্ভাবনা কমে।

Show More

OpinionTimes

Bangla news online portal.

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button
%d bloggers like this: