চীনের দারিদ্রতা বিশ্ববাসীর সামনে এসে পড়েছে : চার দশকের আর্থিক উত্থান-পতনের মুখে

বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া যেতো, যদি মার্কিন মুলুকের সাথে সম্পর্ক ভালো থাকতো

পল্লবী : দেশের দারিদ্রতা দূর করাই এই মুহূর্তে সব থেকে বোরো চ্যালেঞ্জ, বলছে চিনা সরকার। বৃহস্পতিবার চিনা প্রধানমন্ত্রী লি খ্যচিয়াং জানান , চিনে ৬০ কোটির বেশি গরিব মানুষের মাসিক আয় এখনও টেনেটুনে মাসে ১০০০ ইউয়ান। এ দিন বার্ষিক প্রেস কনফারেন্সে খ্যচিয়াং জানান, চিনে মাথা পিছু গড় আয় এখন বছরে ৩০ হাজার ইউয়ান। কিন্তু ৬০ কোটির বেশি মানুষের রোজগার এতটাই কম যে তা দিয়ে দেশের কোনও শহরে এক কামরার ঘর ভাড়াও হয় না। তিনি ও স্বীকার করেন যে দেশের এরূপ অবনতি ঘটেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে। চিনে ত্রয়োদশ ন্যাশনাল কংগ্রেস চলছিল গত কদিন ধরে। পার্লামেন্টের সেই বার্ষিক অধিবেশন শেষ হতে এ দিন গ্রেট হল অব পিপলে বসে সাংবাদিক বৈঠক করেন খ্যচিয়াং।

যদিও সাংবাদিক বৈঠক করেছেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। সাংবাদিকরা গ্রেট হল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি হোটেলে ছিলেন। চিনা প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, দেশে দারিদ্র দূর করা এখন প্রশাসনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আগে দেশে পাঁচ কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে ছিলেন। কিন্তু দেখা গিয়েছে কোভিডের অভিঘাতে আরও কিছু মানুষ ফের দারিদ্র সীমার নীচে চলে গিয়েছেন। লি খ্যচিয়াংয়ের কথায়, ‘এই বছর আমরা দেশে দারিদ্র দূর করব বলে স্থির করেছিলাম। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সেন্ট্রাল কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে দৃঢ়তার সঙ্গে অঙ্গীকার করেছিলেন কমরেড শি চিনফিং।’ তিনি বলেন, সে কথার খেলাপ হবে না। সেই লক্ষ্যপূরণ করতে সবরকম চেষ্টা করবে সরকার। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, কোভিডের কারণে চিনা অর্থনীতি ভালমতোই ধাক্কা খেয়েছে। অর্থনীতির বৃদ্ধি পরের কথায়, তা করোনা সংক্রমণের কারণেই বছরের প্রথম তিন মাসে ৬.৮ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। ১৯৭৬ সালের পর এই প্রথম চিনে এত খারাপ পরিস্থিতি হয়েছে সে দেশের অর্থনীতির।

চিনা প্রধানমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, সরকার বেকার ভাতা আরও বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশে ৬ কোটি লোক এখন বেকার ভাতা বা সে ধরনের কোনও সামাজিক প্রকল্প খাতে ভাতা পান। তা ছাড়া আরও ৩ কোটি মানুষ প্রবীণ নাগরিক পেনশন পান সরকারের থেকে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁদের ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হবে। তবে কোভিডের ধাক্কা সামলাতে কোনও আর্থিক প্যাকেজ যে ঘোষণা করা হবে না তা এদিন খ্যচিয়াং বারবারই স্পষ্ট করেছেন। সেই সঙ্গে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উত্‍পাদনের বৃদ্ধির সম্ভাব্য হার সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথা থেকেই পরিষ্কার যে অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে কোনও লক্ষ্যমাত্রা স্থির করার অবস্থায় সরকার নেই। তবে লি জানিয়েছেন, দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উত্‍পাদন ২০১৮ সালের তুলনায় উনিশ সালে ৬.৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। তার আয়তন দাঁড়িয়েছে ১৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি আরও জানান, কোনও বড় প্যাকেজ ঘোষণা না করলেও সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ সরকার করবে। যাতে অর্থনীতির চাকা ঘোরে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষের কাছে যে টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে তা থেকেই চাহিদা তৈরি হবে। ফলে যোগান বাড়বে, দেশে নতুন সম্পদ তৈরি হয়ে হবে এবং কর আদায়ও হবে।

চিনের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তারা মনে করছে তাদের আরো বেশি পরিমান ব্যাবসায়িক মুনাফা প্রয়োজন যাতে দেশের অর্থনীতিকে আবারো সোজা করে দাঁড় করাতে পারে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমেরিকার মতো ধনী দেশের সাথেই ইতিমধ্যেই সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছে। এই সময় যদি সম্পর্ক ভালো থাকতো তবে চিন হয়তো কিছুটা হলেও সাহায্য পেট মার্কিন তরফ থেকে, মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

Exit mobile version