লোকাল চললেও পেট চলছে না হকারদের, মাথায় পড়ল হাত !

করোনা আবহে লোকাল ট্রেন চালু হলেও উঠতে দেওয়া হচ্ছে না হকারদের, লোকাল চললেও হকারদের উঠতে না দেওয়ায় মুখ ভার তাদের

পৃথা কাঞ্জিলাল : দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস অপেক্ষার পর বুধবার লোকাল ট্রেন (Local Train) চলায় শান্তির মুখ দেখছেন অনেকেই। করোনার কারণে এতদিন লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সমস্যায় ছিলেন হকাররাও (Hawkers)। কিন্তু করোনা আবহে লোকাল ট্রেন চালু হলেও উঠতে দেওয়া হচ্ছে না হকারদের। পেতে টান এবং মুখে হতাশা অনেকেরই। বেশিরভাগ নিত্যযাত্রীরাই যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করতেন লোকাল ট্রেন। কিন্তু এতদিন লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় বন্ধ ছিল রোজগার হকারদের। লোকাল ট্রেন চালু হচ্ছে বলে অত্যন্ত খুশি ছিল হকাররা রোজকার চালুর আশায় কিন্তু সেই আশায় পড়ল জল লোকাল ট্রেন চলছে তো ঠিকই কিন্তু উঠতে বাধা হকারদের। লোকাল ছেড়ে হকারদের উঠতে বাধা দেওয়াতেই স্টেশনে স্টেশনে চলছে হকারদের প্রবল বিক্ষোভ। লোকাল ট্রেনে হকারদের উঠতে বাঁধা দেওয়ায় ব্যারাকপুরে বিক্ষোভ দেখায় হকরারা।

লোকাল ট্রেন চালু হওয়ায় ট্রেনের যাত্রীদের যাতায়াতের সুরাহা হলেও হকারদের রুজিরোজগার নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেল। লোকাল ট্রেনে বা স্টেশন চত্বরে হকারদের বিক্রিবাটা বন্ধ রাখার নির্দেশে প্রশ্ন উঠেছে তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। হতাশায় বহু হকারই প্রশ্ন তুলেছেন, “লোকাল ট্রেন তো চালু হল, আমাদের পেট চলবে কী করে?”

বুধবার থেকে লোকাল ট্রেন চালু হওয়ায় রাজ্যের অন্যান্য স্টেশনের মতো যাত্রীদের ভিড় দেখা গিয়েছে শিয়ালদহেতেও। আগের মতো না হলেও প্রতি ট্রেনে সর্বাধিক ৬০০ যাত্রীর ওঠার অনুমতি দিয়েছে রেল। তবে তাতে রাজ্যের সমস্ত রেল স্টেশনের মতো শিয়ালদহেও হকারদের জায়গা নেই। স্টেশন চত্বরেও জিনিসপত্র বিক্রি করা যাবে না। হকারির জন্য ওঠা যাবে না কোনও ট্রেনেও।

এ দিন শিয়ালদহ চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, প্রশাসনিক নির্দেশ মেনে হকারদের সবক’টি স্টল বন্ধ। তবে তা সত্ত্বেও শিয়ালদহ স্টেশনে উপস্থিত রয়েছেন হকারেরা। করোনার আবহে বিক্রিবাটা বন্ধ হলেও ভোর থেকেই যাত্রীদের সুরক্ষার কথা ভেবে তাঁদের হাতে স্যানিটাইজার স্প্রে করছেন। স্টেশন চত্বরে এসে যাত্রীদের হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করার পরিকল্পনা কেন? উত্তরে একজন হকার বলেন, “কোভিড-১৯ থেকে যাত্রীদের সুরক্ষিত রাখার জন্যই এই কাজ করছি। যাতে যাত্রীরা সুরক্ষিত থাকেন, আমরা স্বাভাবিক ভাবে কাজকর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারি।”

হকারদের ভবিষ্যতের সুরক্ষায় কী ভাবছে রেল তথা রাজ্য প্রশাসন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। লকডাউনের জেরে প্রায় ৮ মাস ধরেই রুজিরোজগার বন্ধ রেল স্টেশনে বিক্রিবাটা করে সংসার চালানো তারা। শিয়ালদহ স্টেশনেই প্রায় ১ হাজার হকার রয়েছেন। স্টেশন চত্বরে কারও রকমারি দোকানের পসরা, কারও বা খাবারের স্টল। তবে ‘নিউ নর্ম্যাল’-এ রাজ্য জুড়ে ধীরে ধীরে সব পরিষেবা চালু হলেও হকারেরা রয়ে গিয়েছেন বঞ্চিত ই। গত ৮ মাসে নানা কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালালেও লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার পরও স্বাভাবিক রুজিরোজগার চালু করার অনুমতি মেলেনি হকারদের।

একজন হকারের বয়ানে , “দীর্ঘদিন ধরেই এই স্টেশনে হকারি করি। কোভিডের জন্য ৮ মাস ধরে বসে রয়েছি। প্যাসেঞ্জারদের কাছে জিনিসপত্র বিক্রি করেই আমাদের সংসার চলে। আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা রেল কর্তৃপক্ষ জানেন।” এখন প্রশ্ন এইটাই যদি এতো বিধি বেঁধে দেওয়া সত্ত্বেও যদি সাধারণ মানুষ ভিড় করে ট্রেন এ উঠছেন এবং বিধি মানা হয়নি অনেক জায়গাতেই, তাহলে হকার দের আগমনে এমন কি ক্ষতি হতে পারে? বেলা বাড়তেই বিধি মানেনি অনেক মানুষ মাস্ক ছাড়া দেখা গেছে তাদের, তাহলে হকারদের অনুমতি স্টেশন এ ঢুকতে বাধা কেন? উত্তর একমাত্র রেল কর্তৃপক্ষএর কাছে। আগামী দিনে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তার ওপর নির্ভর করছে অনেকগুলো পেট।

Exit mobile version