প্রেরনা দত্তঃ চলে গেলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক দেবেশ রায়। বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। বৃহস্পতিবার রাত ১০ টা ৫০ মিনিটে তিনি প্রয়াত হন বাগুইআটির এক বেসরকারি নার্সিংহোমে। বুধবার রাতে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল ওই হাসপাতালে। এইচডিইউতে রেখে চিকিৎসা চলছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে অবস্থার অবনতি হতে শুরু হয়।
দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন দেবেশ রায়। ভার্টিগোর সমস্যায় ভুগছিলেন। তবে, বুধবার ডিহাইড্রেশানজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চাকরি সূত্রে লেখকের পুত্র সস্ত্রীক অহমেদাবাদে থাকায়, বাবার মৃত্যুসংবাদ পেলেও লকডাউনজনিত কারণে দ্রুত কলকাতায় পৌঁছতে পারছেন না।
১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর পূর্ব বঙ্গের পাবনা জেলার বাগমারা গ্রামে তাঁর জন্ম। শৈশবেই জন্মভূমি ছেড়ে উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা হন তিনি। সেখানেই কেটেছে কৈশোর ও যৌবন।বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময় প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পড়েন। রাজবংশী ভাষায় তাঁর ছিল অনায়াস বিচরণ। কলকাতা শহরে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।
প্রত্যন্ত মানুষের সঙ্গে নিজেকে উজার করে মিশতেন বলেই দাঙ্গার প্রতিবেদন, খরার প্রতিবেদন, শিল্পায়নের প্রতিবেদনের মতো ক্ষুরধার লেখা পাঠকের মনকে ছুঁয়ে যেত। তিনি নিজেকে বলতেন, “আমি জলপাইগুড়ির ছেলে। বলতে পারো উত্তরবঙ্গেরও। বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য, পার্টির নেতা…মন খারাপ করার সময় আমার ছিল না।”
তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে তিস্তা পাড়ের বৃত্তান্ত সাড়া ফেলে দেয় সাহিত্য মহলে। ১৯৯০ সালে এই উপন্যাসটির জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন।তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘যযাতি’। তাঁর সাহিত্যসৃষ্টির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘উদ্বাস্তু’, ‘নিরস্ত্রীকরণ কেন’, ‘কলকাতা ও গোপাল’, ‘সময় অসময়ের বৃত্তান্ত’, ‘শরীরে সর্বস্বতা’, ‘বরিশালের যোগেন মণ্ডল’, ‘তিস্তাপুরাণ’ এবং ।
বরাবরই ব্যতিক্রমী সাহিত্যকীর্তির জন্য দেবেশ রায় পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে সমগ্র সাহিত্যসমাজে গভীর শোক নেমে এসেছে।